জীবের জন্য বায়ু খুব গুরুত্বপূর্ণ। বায়ু ছাড়া জীব বেঁচে থাকতে পারে না। উদ্ভিদ বায়ুর কার্বন ডাইঅক্সাইডের সাহায্যে খাদ্য তৈরি করে। আবার শ্বাস গ্রহণের জন্য প্রাণীর বায়ুর অক্সিজেন প্রয়োজন।
মানুষের বেঁচে থাকার জন্য বায়ু প্রয়োজন। এছাড়াও দৈনন্দিন নানা কাজে মানুষ বায়ু ব্যবহার করে থাকে।
প্রশ্ন : মানুষ দৈনন্দিন জীবনে কী কী কাজে বায়ু ব্যবহার করে ?
কাজ : বায়ুপ্রবাহ কীভাবে কাজ করে ?
কী করতে হবে :
১. একটি নারিকেল বা তালের পাতা ও পিন নিই ।
২. নিচের ছবি দেখে একটি চরকা তৈরি করি।
৩. চরকাটিকে একটি পিনের মাথায় বসিয়ে বায়ুর বিপরীত দিকে ধরি।
৪. চরকাটির কী ঘটে লক্ষ করি।
৫. কাজটি নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি।
পর্যবেক্ষণ থেকে নিচের বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করি ।
১. চরকাটির কী ঘটে ? কেন ঘটে?
২. অনুমান করতে পার বায়ুপ্রবাহ আর কী কী করতে পারে ?
৩. ডান পাশের ছকে দৈনন্দিন জীবনে বায়ুর ব্যবহারের একটি তালিকা তৈরি কর।
দৈনন্দিন জীবনে বায়ুপ্রবাহের ব্যবহার |
---|
মানুষ দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্নভাবে বায়ু ব্যবহার করে।
কাজটি থেকে আমরা দেখলাম, বায়ুপ্রবাহ চরকা ঘুরাতে পারে। বায়ুপ্রবাহের সাহায্যে এভাবে বড় চরকা বা টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। দৈনন্দিন জীবনে বায়ুপ্রবাহের নানাবিধ ব্যবহার রয়েছে। মানুষ শরীর ঠান্ডা রাখতে হাতপাখা বা বৈদ্যুতিক পাখার বায়ুপ্রবাহ ব্যবহার করে। বায়ুপ্রবাহ ব্যবহার করে নদীতে পাল তোলা নৌকা চলে। কোনো ভেজা বস্তুকে শুকানোর জন্য বায়ুপ্রবাহ ব্যবহার করা হয়। বায়ুপ্রবাহ ভেজা বস্তু থেকে দ্রুত পানি সরিয়ে নিতে সাহায্য করে। আমরা ভেজা কাপড় শুকানোর জন্য খোলা জায়গায় বাতাসে মেলে রাখি। আবার ভেজা চুল শুকানোর জন্য হেয়ার ড্রায়ারের বায়ুপ্রবাহ ব্যবহার করি।
ফুটবল, গাড়ি, রিকসা বা সাইকেলের টায়ার ইত্যাদি ফোলানোর জন্য মানুষ বায়ু ব্যবহার করে। এছাড়া মানুষ বায়ুর উপাদানগুলোকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে। শ্বাসকষ্টের রোগী, ডুবুরি এবং পর্বতারোহীকে অক্সিজেন সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। ইউরিয়া সার তৈরিতে এবং প্যাকেট বা টিনের কৌটায় বিভিন্ন খাদ্য যেমন—মাছ, মাংস, চিপস ইত্যাদি সংরক্ষণে বায়ুর নাইট্রোজেন ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন কোমল পানীয়তে ঝাঁঝালো ভাব ধরে রাখার জন্য কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করা হয়। আগুন নেভানোর জন্য অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রেও কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করা হয়।
এভাবেই বায়ু মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
আমরা প্রায়ই শুনে থাকি যে, বায়ু দূষিত হচ্ছে। কীভাবে বায়ু দূষিত হচ্ছে ? বায়ু দূষণ প্রতিরোধ করা কেন জরুরি ? বায়ু দূষণমুক্ত রাখতে আমরা কী কী করতে পারি?
প্রশ্ন : বায়ু দূষণের কারণ ও প্রভাবগুলো কী কী?
কাজ : বায়ু দূষণের কারণ ও প্রভাব
কী করতে হবে :
১. নিচে দেখানো ছকের মতো খাতায় একটি ছক তৈরি করি।
বায়ু দূষণের কারণ | বায়ু দূষণের প্রভাব |
---|---|
২. বায়ু দূষণের কারণ ও প্রভাবগুলোর একটি তালিকা তৈরি করি।
৩. কাজটি নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি।
বিভিন্ন ধরনের পদার্থ যেমন— রাসায়নিক পদার্থ, গ্যাস, ধূলিকণা, ধোঁয়া অথবা দুর্গন্ধ বায়ুতে মিশে বায়ু দূষিত করে। এই দূষণ জীব ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি সাধন করে।
মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বায়ু দূষণের একটি বড় কারণ । বিশেষ করে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুতে বিভিন্ন ধরনের গ্যাস নির্গত হয়। কলকারখানা ও যানবাহন থেকে এ সকল গ্যাস বায়ুতে আসে। গাছপালা পোড়ানোর ফলে উৎপন্ন ধোঁয়া থেকেও বায়ু দূষিত হয়। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা ও মলমূত্র ত্যাগের কারণে বায়ুতে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং বায়ু দূষিত হয় ।
বায়ু দূষণ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে মানুষ ফুসফুসের ক্যান্সার, শ্বাসজনিত রোগ, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। পরিবেশের উপরও বায়ু দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাস ছড়ায়। এই সকল গ্যাস বায়ুতে বেড়ে যাওয়ার ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও এসিড বৃষ্টি হচ্ছে। কলকারখানার ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট বিভিন্ন ধরনের গ্যাস মেঘের সাথে মিশে যাওয়ার ফলে এসিড বৃষ্টি তৈরি হয়। এসিড বৃষ্টির ফলে জীবের ক্ষতি হতে পারে বা জীব মারা যেতে পারে।
শক্তির ব্যবহার কমিয়ে আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহার কমাতে পারি। যেমন— বাতি বন্ধ রেখে, গাড়ি ব্যবহারের পরিবর্তে পায়ে হেঁটে বা সাইকেল ব্যবহার করে ইত্যাদি। এছাড়া প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার কমিয়ে, পুনর্ব্যবহার করে ও রিসাইকেল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা দূষণ প্রতিরোধ করতে পারি। ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে এবং গাছ লাগানোর মাধ্যমেও বায়ু দূষণমুক্ত রাখতে পারি।
আমরা কীভাবে বায়ু দূষণ প্রতিরোধ করতে পারি ?
কী করব? |
---|
১. উপরের পাশে দেখানো ছকের মতো খাতায় একটি ছক তৈরি করি ?
২. ছকে বায়ু দূষণ প্রতিরোধে কী কী করব তার একটি তালিকা তৈরি করি।
৩. সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করে কাজটি সম্পন্ন করি।
১) মানুষ কীভাবে বায়ুপ্রবাহকে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করে ?
২) মানুষের স্বাস্থ্যের উপর বায়ু দূষণের ক্ষতিকর প্রভাবসমূহ কী ?
৩) বায়ু দূষণ প্রতিরোধের তিনটি উপায় লেখ ।
৪) বায়ু দূষণের কারণ কী ?
১) ভেজা কাপড় যত দ্রুত সম্ভব শুকানো প্রয়োজন। কিন্তু বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। ঘরের ভেতর কীভাবে আমরা দ্রুত কাপড় শুকাতে পারি ?
২) রিসাইকেল প্রক্রিয়া কীভাবে বায়ু দূষণ কমাতে পারে ?
৩) কী কী কারণে বায়ু দূষিত হয়? মানুষ কীভাবে বায়ু দূষণ করছে?